Skip to main content

বরফ টুকরো আর কৃষকের ছেলে: শিক্ষামূলক গল্প


বরফ টুকরো আর কৃষকের ছেলে: শিক্ষামূলক গল্প - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - একদিন এক কৃষক ছেলে খুব কড়া রোদের মধ্যে তার জমিতে ধান কাটছিল। খুব রোদে গরমে তার খুব ঘাম ঝরছিল।ধান কাটতে কাটতে তার খুব পানির তেষ্টা পেল। সে আগে থেকেই একটা জগে করে কিছু পানি আর মুড়ি এনে রাখলো খাওয়ার জন্য। আর সে পাড়ে এসে একটু পানি খেল। পানি খেয়ে সে একটা গাছের ছায়ায় একটু বিশ্রাম নিতে গেল। এমন সময় হঠাৎ অনেক জোড়ে তুফান বৃষ্টি শুরু হলো। তার সাথে কোনো ছাতা ছিল না। তাই গাছের তলায় বসে সে ভিজতে লাগল। আর অবাক হয়ে দেখতে লাগল কি বিশাল বিশাল বৃষ্টির ফোটাগুলো। গায়ে পড়লেই কুপোকাত। অনেক বড় বড় বৃষ্টির ফোটাগুলো। সাথে আবার শিলা বৃষ্টিও হচ্ছে। শিলা মানে হলো বৃষ্টির সাথে বরফ পড়ছে। একটু পর অনেকগুলো বরফ পড়তে লাগল বৃষ্টির সাথে। শিলা বরফগুলো একটু বড় বড়।ওদিকে বৃষ্টি হচ্ছে খুব জোড়ে। সে খেয়াল করল অনেকগুলো বরফ কণার মাঝে একটা বরফ কণা খুব বড়। এই প্রায় একটা আপেলের মতো বড়। সে একটু অবাক হয়ে গেল। তারপর সেই অদ্ভুত বড় বরফ টুকরাটা হাতে নিয়ে দেখল। সে যেমনি দুষ্টামি করে বরফ টুকরাটা মুখে দিল। একটু খাওয়ার পর হঠাৎ করে ভিতরে শক্ত একটা পাথরের মতো কি যেন লাগল। পাথরতো আর যে সে পাথর নয়, এতো এক হীরার টুকরা। বরফের ভিতরে হীরাও থাকতে পারে। তবে খুব সৌভাগ্যবান যারা তারা হয়তো পায়। এখানে আমাদের কৃষক ছেলেটার মন খুব পরিষ্কার ছিল। গায়ে সবাই তাকে খুব ভালোবাসতো তার সুন্দর ব্যবহারের জন্য। এজন্যই হয়তো বা সে খুব সৌভাগ্যবান। সে একটা মস্ত দামী হীরা পেল ঐ বরফ টুকরার মধ্যে। এরপর সে ওটা তার সাথে করে ঘরে নিয়ে গেল। নিয়ে গিয়ে এটা তার বউকে দেখালো। বউতো খুশিতে প্রায় পাগল হবার দশা। আর তার বউ ছিল ভীষণ লোভী। সে বললো এই হীরাটা দিয়ে আমাকে একটা দামী গয়না কিনে দিবে। সাথে বালা, চুরি, দুল ইত্যাদি ইত্যাদি। কৃষক ছেলেটা তার বউয়ের এত লোভী আবদার শুনে মন খুব খারাপ করে বসে রইল। তারপর সে হীরাটা বিক্রি করতে রাজ দরবারে ছুটে গেল। সেখানে সিপাহীরা তাকে ভেতরে ঢুকতেই দিচ্ছিল না। কারণ সে এক গরীব কৃষক। তবুও অনেক জোর করে সে প্রাসাদে রাজ দরবারে গিয়ে রাজার কাছে তার এই হীরার কথাটা বললো। মন্ত্রী এই কথা শুনে একটা কুবুদ্ধি করল। মন্ত্রী বলে উঠলো “মহারাজ এই হীরাটা আমার। আমার গিন্নি এই হীরাটা কিছুদিন আগে ঐ গাছ তলায় হারিয়ে ফেলেছিল। অনেক খুজেও আর পাওয়া যায়নি। এটাই সেটা। এখন আমার হীরাটা আমাকে দিয়ে দাও কৃষক। কৃষকতো এ কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। যাও এই গরীর দুখীর উপর ঈশ্বরের একটু দয়া হলো। তাও এই লোভী মন্ত্রী বলে কি? হীরাটা নাকি তার। কি আর করার! জোর যার মুল্লুক তার, এটা কৃষক ভালোভাবেই জানতো। যেহেতু সে নিজের পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারলো না। তাই হীরাটা অগত্যা মন্ত্রীর হাতেই তুলে দিতে হলো। তারপর কাঁদতে কাঁদতে কৃষক রাজপ্রাসাদ থেকে ফিরে আসলো। ঘরে এসে বউকে সব বললো। বউও কেদে কেদে সার। এত মস্ত দামী হীরাটা পেয়েও পাওয়া হলোনা কৃষকের। তবুও সে কৃষক মন খারাপ করলো না। সে নিজের হাতের উপর ভরসা করে আবার কাজ করা শুরু করলো। আরেকদিন আবার জমিতে মাটি কাটতে গিয়ে এবার পেল এক কলসি সোনার মোহর। সে এগুলোর কথা নিজের লোভী বউকেও জানালো না। আর রাজাকেও জানালো না। সে এগুলো নিয়ে দূরের এক রাজ্যে গিয়ে এক ধনী ব্যক্তির বিশাল বাড়ি বাগান সহ কিনে নিলো। আর সে রাজ্যে ঐ নতুন বাড়িতে গিয়েই বসবাস করতে লাগল। তার বউ তাকে জিজ্ঞেস করলে পরে জানালো সব। এই গল্প থেকে আমরা অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি: 1।প্রথমত কোনো হীরা তুমি পথে কুড়িয়ে পাবে এই ভেবে অলস জীবনযাপন করাটা বোকামি। নিজের হাতের উপর ভরসা কর। হীরার চেয়েও দামী কিছু করতে পারবে। 2। তোমার উন্নতির কথা নিজের স্ত্রীকেও খুলে বলা ঠিক না। 3। রাজাকে ভরসা করলেই হয় না। রাজার সাথে অনেক খারাপ মানসিকতার লোকও থাকতে পারে। যারা তোমাকে নি:স্ব করে দিবে। 4।যে দেশে তুমি বিপদে আছো, সে রাজ্য ছেড়ে দূরে যাওয়াটাই সমুচিত। 5। সে যদি তার বউকে আগেই বলে দিতো সোনার মোহরের কথা। তাহলে তার আর বাড়ি কিনা হতো না। তাই কোনোকিছু ঘটে যাওয়ার পরেই তা জানানো উত্তম। আগে জানালে বাড়া ভাতে ছাই পড়তে পারে। - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - *** বন্ধুরা গল্পটা পড়ে কেমন লাগল কমেন্ট বক্সে মতামত জানাবেন। আর মন চাইলে আপনার বন্ধুদেরকেও গল্পটা শেয়ার করতে পারেন। এত বড় লেখাটা কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সবসময় নতুন নতুন গল্প পেতে অবশ্যই আমাদের ব্লগের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ। ***

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter)!!

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার(Dark matter) ! লিখেছেন : হিমাংশু কর সেপ্টেম্বর 26, 2018 সৃষ্টিতত্ত (cosmology) ও মহাবিশ্বের দুরতম অঞ্চলগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পেরেছি।এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা।এ ছাড়াও আলোর গতির সীমাবদ্ধতার কারনেও আমরা এ সকল অঞ্চলগুলো সম্পর্কে এখনো ভাল মত জানি না।তবে আমাদের অর্জন ও কম না।আমরা ইতিমধেই আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ অভিযান এর জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছি।এও বা কম কি?তবে যাই হোক সে আলোচনা আর বাড়াবো না।এবার আমরা লক্ষ করব গ্যালাক্সিগুলোর দিকে।নিউটনের মহাকর্ষ বলের( gravitational force ) সুত্রগুলি যদি আমারা গ্যালাক্সিগুলোর উপর প্রয়োগ করি , তাহলে দেখা যাবে যে, গ্যালাক্সিগুলোর চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে পরার কথা।কিন্তু আমরা জানি গ্যালাক্সি বা তারকাপুঞ্জের ভেতরের বস্তুগুল একটি কেন্দ্রিয় বিন্দুর উপর নির্ভর করে ঘুরতেছে।কারন তাদের পারস্পারিক আকর্ষণ এক ধরনের কন্দ্রাতিক(centripetal) শক্তির সৃষ্টি করে থাকে।অবাক হবার কথা হল হিসাব করে দেখা গেছে এ ধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি করার মত পর্যাপ্ত বস্তু এসব গ্যালাক্সিগুলোর নেই।এই ব্যাপারটি ১৯৭০ এর দশকে ওয়াশিংটন ডি...

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্প - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - এক বনে ছিল এক হিংস্র বাঘ। সে যেকোনো প্রাণীকে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তো। কাউকে সে মানতো না। একদিন এক নিরীহ হরিণ সেই বাঘের কবলে পড়লো। হরিণটা অনেক যুদ্ধ করেও পালাতে পারলো না। বাঘ মাত্র ওকে সুবিধামতো কামড় বসাবে। এমন সময় হরিণের মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। হরিণ বলল, “ওহে বাঘ। তুমিতো সবাইকেই খাও। আমায় না হয় ছেড়ে দাও। আমার মাংস খেলে তোমার একটুও পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং বিনিময়ে আমি তোমাকে অনেকগুলো গরু দিবো। তা দিয়ে এক মাস চলে যাবে তোমার।” বাঘ কথাটা শুনে ভেবে দেখল কথাটাতো মন্দ না। তাই সে হরিণটাকে ছেড়ে দিল। পরে হরিণ চলে গেল সেখান থেকে। আর বাঘ তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু চালাক হরিণকে আর পায় কে? হরিণতো তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জীবনে রক্ষা পেল। তাই গায়ের জোর না থাকলেও বুদ্ধির জোর সবচেয়ে দামি। এই গল্প থেকে আমরা অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি: 1। কাউকে সহজেই বিশ্বাস করা ঠিক না। সহজেই বিশ্বাস করাটা বোকামি। 2। বিপদে পড়লে ভয় না পেয়ে বরং ভয়টাকে জয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 3। গায়ের শক্তি না থাকলেও বুদ্ধির জোর দিয়ে ...

বাসর রাত- ভালোবাসার গল্প

বাসর রাত সেপ্টেম্বর 25, 2018 গল্প লিখেছেন :  কাল্পনিক বাসর ঘরে ঢুকেই নববধূকে বললাম ‘ ফ্রেশ হয়ে আস। মুখের আটা-ময়দা দেখে বলতে পারবনা তুমি চাঁদের মত সুন্দর’ নববধূ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। তারপর বলল ‘বিয়ের আগে আমাকে দেখেননি?’ আমি মুখ বাঁকা করে বললাম ‘হ্যাঁ একবার তো দেখেছিলাম কিন্তু সেদিন আরো বেশি আটা-ময়দা ছিল’ নববধূ আমার দিকে যেভাবে তাকাল মনে হচ্ছে আমাকে চিবিয়ে খাবে। তারপর খাট থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাবার জন্য পা বাড়াল। আমি বললাম ‘তোমার নামটা যেন কি?’ নববধূ ভেংচি দিয়ে বলল ‘বাহ মাত্র একদিনে নামটাই ভুলে গেলেন? কালকে তো মনে হয় বলবেন “এই মেয়ে তুমি এ বাড়িতে কি কর” ‘ আমি জোর স্বরে বললাম ‘নামটা জিজ্ঞেস করেছি আর এত কথা শুনিয়ে দিলে। এত বেশি কথা মেয়েদের মুখে মানায় না।’ নববধূ ‘ইরা’ বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। . আমি বসেবসে হাসছি। আয়নার সামনে গিয়ে হাসছি। এরকম যন্ত্রণা মনে হয় বাসর রাতে কোন মেয়ে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে প্যারা ঘরে আবার আসল। এবার চোখেমুখে লজ্জা দেখতে পাচ্ছি। আটা-ময়দা ছাড়া তো ভালই দেখাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরবে মনে হয়। আমি বললাম ‘মিসেস প্যারা আপনাকে আটা-ময়দা ছ...