Skip to main content

শিশু যখন খেতে চায় না!!

শিশু যখন খেতে চায়না!!
অক্টোবর 07, 2018 : বিভাগ- স্বাস্থ্য টিপস
প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান শিশুদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা, খাদ্য, পুষ্টি সমস্যাসহ নানা বিষয়ে ইত্তেফাকের স্বাস্থ্য পাতায় নিয়মিত লিখবেন। এ সংখ্যায় লিখেছেন শিশু কেন খেতে চায়না।
অনেক মা-ই অভিযোগ করেন যে, তার শিশু খেতে চায় না। খাওয়াবার ব্যাপারে অনিয়মই হচ্ছে শিশুর খেতে না চাওয়ার প্রধান কারণ। মা যদি খাওয়াবার ব্যাপারে যথাযথ নিয়মকানুন মেনে না চলেন, তবে শিশুর খেতে না চাওয়াই স্বাভাবিক। অনেক মা শিশুর খাবারের মাঝখানে তাকে অনিয়মিতভাবে বিস্কুট, ফল, লজেন্স, আইসক্রিম ইত্যাদি খেতে দেন। কেউ কেউ নিয়ম করে ছয়টায় দুধ, আটটায় ডিম, দশটায় দুধ, বারোটায় স্যুপ এ রকম ইচ্ছেমতো চার্ট বানিয়ে খাওয়ান। অনেকে আবার শিশুকে নিয়মমাফিক খাওয়ানোর মাঝে কান্নামাত্রই মায়ের দুধ খাওয়ান। কোনো কোনো বাড়িতে শিশু নিজের খাবার সময় ছাড়া অন্য সময়ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য বা আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে খায়। আবার অনেক মা তার শিশু সাতটায় সময় পেটভরে খায়নি বলে আটটার সময় তাকে আরেকবার খাবার দেন, নয়টার সময় আবার চেষ্টা করেন এবং এমনিভাবে সারাদিন ধরেই প্রচেষ্টা চলতে থাকে। এ সব অভ্যাসই শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
প্রসঙ্গত: একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন : খাবার হজম হলেই শিশুর ক্ষিদে লাগবে। আপনি যদি খাওয়ার সুনির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময়ে শিশুকে কিছু খাওয়ান, তবে ক্ষতি হবে তিনটি-
প্রথমত ঃ যে খাবার পেটে আছে, তা ঠিকমতো হজম হবে না।
দ্বিতীয়ত ঃ আপনার দেয়া খাবার সে পুরোপুরি খাবে না। কারণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে তার খিদে লাগেনি।
তৃতীয়ত ঃ এ খাবার দেয়ার ফলে তার যখন ক্ষিদে লাগার কথা ছিল, সেই খিদেটা তখন লাগবে না। ফলে সে পরিমাণে আরো কম খাবে। জোর করলেও কোনো লাভ হবে না। বরং বমি ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে তার খিদে ও খাবার রুচি নষ্ট করার জন্য অনিয়মিত খাওয়ানোর পদ্ধতিই দায়ী।
অনেক শিশু স্কুল থেকে ফিরেই বিস্কুট, ফল বা ফলের রস ইত্যাদি খায়। তার এক ঘন্টা পরেই হয়তো তার দুপুরের খাবার সময়। তখন শিশু ঠিকমতো সে খাবারটা আর খেতে চাইবে না। কারণ, ইতিমধ্যেই তার খিদে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক শিশু সারাদিন ইচ্ছেমতো যখন-তখন বিস্কুট, লজেন্স, আইসক্রিম, ফল ইত্যাদি খেয়ে পেট ভর্তি করে রাখে। কিন্তু খাবার সময় কিছুই খায় না। এসব অভ্যেসও ক্ষতিকর।
মূলকথা হলো-শিশুকে সব সময় নিয়ম বা সময়সূচি অনুযায়ী খেতে অভ্যস- করে তুলুন। কি খাওয়াচ্ছেন তার চেয়ে বড় কথা হলো কখন খাওয়াচ্ছেন। শিশু খেতে চাইছে না বা খাচ্ছে না-এ অজুহাতে তাকে ঘন্টায় ঘন্টায় খাবার দেবেন না। শিশু খেতে না চাইলে প্রয়োজনবোধে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। তবু যখন-তখন খাবর দিয়ে তার খিদে নষ্ট করবেন না।
শিশুকে খাওয়াবার ব্যাপারে অযথা জোর করবেন না
একবার জোর করে খাওয়ালে পরে যখনই তাকে খাওয়াতে চাইবেন তখনই সে ভয় পাবে। ফলে সে আরও কম খাবে। খাওয়ার প্রতি তার কোনো উৎসাহ থাকবে না। খাওয়ার সময়টা আনন্দ ও পরিতৃপ্তির পরিবর্তে একটা খাবার যুদ্ধে পরিণত হবে। যুদ্ধভীতু কোনো শিশু এরপর মায়ের সঙ্গে আর খাবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চাইবে না। এতে শিশুর স্বাস্থ্য নষ্ট হবে, মেজাজ খিটখিটে হবে, এমন কি বমিও হতে পারে। মোটকথা খাওয়াটা যেন শিশুর জন্য আনন্দদায়ক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হাতে সময় নিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে। শিশুকে লোভ দেখানো যাবে, প্রশংসা করতে হবে-কিন্তু জোর করা যাবে না।
কিভাবে ব্রান্ড বদল করা যায়
গরুর দুধের বদলে কৌটার দুধ অথবা কৌটার দুধের বদলে গরুর দুধ অথবা এক ব্রান্ড বদলে অন্য ব্রান্ডে যেতে হলে, হঠাৎ করে যাওয়া যাবে না। শিশু দিনে যে ক’বার খায়, তার মধ্যে একবার করে নতুন দুধ দেয়া শুরু করতে হবে। শিশু দিনে ৬ বার খেলে নতুন একবার ও পূর্বের দুধ ৫ বার-এভাবে দু’-তিনদিন খাওয়াতে হবে। তারপর নতুন দুধ দু’বার ও পূর্বের দুধ ৪ বার। এভাবে দু’দিন পর পর একবার করে নতুন দুধের মাত্রা বাড়িয়ে শিশুকে পূর্বের দুধ বদলে নতুন দুধ দেয়া অভ্যাস করতে হবে। তাই ব্রান্ড বদল করতে হলে এক কৌটা দুধ ঘরে থাকতে থাকতেই আরেক কৌটা কিনে এনে মজুদ করে রাখতে হবে। শিশু কোনো কারণে পাতলা দুধ খেলে, তা ঘন করার জন্যও এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। অন্যথায় হঠাৎ করে দুধ ঘন করে ফেললে শিশুর পেট খারাপ করবে।
প্রসঙ্গঃত উল্লেখ্য, প্রয়োজন না হলে দুধ বা খাবারের ব্রান্ড বদল করা উচিত নয়। কোনো ব্রান্ডে শিশু অভ্যস- হয়ে পড়লে সেটাই চালাতে হবে। ঘন ঘন ব্রান্ড বদল করা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। শিশুকে কখনো জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। শিশুর নিয়মিত ওজন নেবেন। যদি তার ওজন ক্রমশ বাড়তে থাকে, তবে শিশু কম খেলেও তাতে একবারেই ভয়ের কিছু নেই।
শিশুর দাঁত ওঠার পর তাকে শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করুন (উপরোক্ত খাদ্য তালিকা দেখুন) শিশুর দাঁত উঠে গেলে, সে খাবার দাঁত দিয়ে চিবোতে বা কামড়াতে ভালোবাসে। বড়দের অনুকরণে বসতে চায়, নিজ হাতে খেতে চায়। তখন তাকে খাইয়ে দিলে চলবে না। অনেক সময় সে নিজেই চামচ দিয়ে তুলে খেতে চায়, জামাকাপড় নষ্ট করে ফেলে। শিশু এভাবেই খায়, এভাবেই খাবে। কখনোবা শিশুর বিশেষ কোনো প্লেট গ্লাস বা চামচের ওপর নজর থাকে। শিশুকে স্বাভাবিক দুষ্টুমি থেকে জোর করে দূরে সরিয়ে রাখবেন না।
অধ্যাপক ডা. এম আর খান
জাতীয় অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞ
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৯
(সংগৃহীত)

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter)!!

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার(Dark matter) ! লিখেছেন : হিমাংশু কর সেপ্টেম্বর 26, 2018 সৃষ্টিতত্ত (cosmology) ও মহাবিশ্বের দুরতম অঞ্চলগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পেরেছি।এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা।এ ছাড়াও আলোর গতির সীমাবদ্ধতার কারনেও আমরা এ সকল অঞ্চলগুলো সম্পর্কে এখনো ভাল মত জানি না।তবে আমাদের অর্জন ও কম না।আমরা ইতিমধেই আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ অভিযান এর জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছি।এও বা কম কি?তবে যাই হোক সে আলোচনা আর বাড়াবো না।এবার আমরা লক্ষ করব গ্যালাক্সিগুলোর দিকে।নিউটনের মহাকর্ষ বলের( gravitational force ) সুত্রগুলি যদি আমারা গ্যালাক্সিগুলোর উপর প্রয়োগ করি , তাহলে দেখা যাবে যে, গ্যালাক্সিগুলোর চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে পরার কথা।কিন্তু আমরা জানি গ্যালাক্সি বা তারকাপুঞ্জের ভেতরের বস্তুগুল একটি কেন্দ্রিয় বিন্দুর উপর নির্ভর করে ঘুরতেছে।কারন তাদের পারস্পারিক আকর্ষণ এক ধরনের কন্দ্রাতিক(centripetal) শক্তির সৃষ্টি করে থাকে।অবাক হবার কথা হল হিসাব করে দেখা গেছে এ ধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি করার মত পর্যাপ্ত বস্তু এসব গ্যালাক্সিগুলোর নেই।এই ব্যাপারটি ১৯৭০ এর দশকে ওয়াশিংটন ডি...

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্প - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - এক বনে ছিল এক হিংস্র বাঘ। সে যেকোনো প্রাণীকে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তো। কাউকে সে মানতো না। একদিন এক নিরীহ হরিণ সেই বাঘের কবলে পড়লো। হরিণটা অনেক যুদ্ধ করেও পালাতে পারলো না। বাঘ মাত্র ওকে সুবিধামতো কামড় বসাবে। এমন সময় হরিণের মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। হরিণ বলল, “ওহে বাঘ। তুমিতো সবাইকেই খাও। আমায় না হয় ছেড়ে দাও। আমার মাংস খেলে তোমার একটুও পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং বিনিময়ে আমি তোমাকে অনেকগুলো গরু দিবো। তা দিয়ে এক মাস চলে যাবে তোমার।” বাঘ কথাটা শুনে ভেবে দেখল কথাটাতো মন্দ না। তাই সে হরিণটাকে ছেড়ে দিল। পরে হরিণ চলে গেল সেখান থেকে। আর বাঘ তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু চালাক হরিণকে আর পায় কে? হরিণতো তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জীবনে রক্ষা পেল। তাই গায়ের জোর না থাকলেও বুদ্ধির জোর সবচেয়ে দামি। এই গল্প থেকে আমরা অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি: 1। কাউকে সহজেই বিশ্বাস করা ঠিক না। সহজেই বিশ্বাস করাটা বোকামি। 2। বিপদে পড়লে ভয় না পেয়ে বরং ভয়টাকে জয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 3। গায়ের শক্তি না থাকলেও বুদ্ধির জোর দিয়ে ...

বাসর রাত- ভালোবাসার গল্প

বাসর রাত সেপ্টেম্বর 25, 2018 গল্প লিখেছেন :  কাল্পনিক বাসর ঘরে ঢুকেই নববধূকে বললাম ‘ ফ্রেশ হয়ে আস। মুখের আটা-ময়দা দেখে বলতে পারবনা তুমি চাঁদের মত সুন্দর’ নববধূ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। তারপর বলল ‘বিয়ের আগে আমাকে দেখেননি?’ আমি মুখ বাঁকা করে বললাম ‘হ্যাঁ একবার তো দেখেছিলাম কিন্তু সেদিন আরো বেশি আটা-ময়দা ছিল’ নববধূ আমার দিকে যেভাবে তাকাল মনে হচ্ছে আমাকে চিবিয়ে খাবে। তারপর খাট থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাবার জন্য পা বাড়াল। আমি বললাম ‘তোমার নামটা যেন কি?’ নববধূ ভেংচি দিয়ে বলল ‘বাহ মাত্র একদিনে নামটাই ভুলে গেলেন? কালকে তো মনে হয় বলবেন “এই মেয়ে তুমি এ বাড়িতে কি কর” ‘ আমি জোর স্বরে বললাম ‘নামটা জিজ্ঞেস করেছি আর এত কথা শুনিয়ে দিলে। এত বেশি কথা মেয়েদের মুখে মানায় না।’ নববধূ ‘ইরা’ বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। . আমি বসেবসে হাসছি। আয়নার সামনে গিয়ে হাসছি। এরকম যন্ত্রণা মনে হয় বাসর রাতে কোন মেয়ে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে প্যারা ঘরে আবার আসল। এবার চোখেমুখে লজ্জা দেখতে পাচ্ছি। আটা-ময়দা ছাড়া তো ভালই দেখাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরবে মনে হয়। আমি বললাম ‘মিসেস প্যারা আপনাকে আটা-ময়দা ছ...