Skip to main content

গরমে চুল ও ত্বকের যত্নে প্রয়োজনীয় টিপস

গরমে চুল ও ত্বকের যত্নে প্রয়োজনীয় টিপস

শীতের বিদায়ের শেষে এবার উকি দিচ্ছে বসন্ত। আর বাতাসের উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে চুল ও ত্বকে যেন এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সূর্যের তাপ এবং ধুলাবালুর কারণে এ সময়ে চুল ও ত্বকের জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। কারন আমাদের সুন্দর, সুস্থ আর চকচকে ত্বক ও ঝলমলে চুল প্রত্যাশা থাকলেও, কিন্তু গরমে এই ত্বক হয়ে যায় তেলতেলে ও ঘামযুক্ত। এতে ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। আর চুলের ক্ষেত্রে তো কথায় নেই রুক্ষ, আগা ফেটে যাওয়া এবং না বাড়ার সমস্যা লেগেই থাকে।  আপনার একটু খানি যত্নে গরমের দিনে ত্বক ও চুল থাকতে পারে সকল সমস্যামুক্ত। চলুন জেনে নেই গরমের সময়ে কিভাবে চুল ও ত্বকের যত্ন নিবেন।

গরমে ত্বকের যত্ন টিপস

প্রচুর পানি পান করুন

পানি শুধু শরীরে আর্দ্রতা জোগায় না, ত্বককে করে তোলে সজীব। প্রচন্ড গরমে ঘামের মাধ্যমে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। এই সময় প্রচুর পানি খাওয়া দরকার। এছাড়াও প্রয়োজনে ফলের রস, লেবুর রস এবং খাবার স্যালাইনও পান করা যেতে পারে। মোটকথা ত্বক সুন্দর রাখতে এ সময়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে।

টোনার ব্যবহার করুন

টোনার ত্বকের রোমকূপ বন্ধ ও ত্বককে শীতল রাখতে সাহায্য করে। বাজার থেকে ভালো কোম্পানির টোনার দেখে কিনে ব্যবহার করতে হবে। ঘরোয়া টোনার হিসেবে গোলাপজল ভালো কাজ করে।

ওয়াটার বেজ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন

গরমের সময়ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার বন্ধ করবেন না। কারণ ময়েশ্চারাইজার ত্বকে আর্দ্রতা জোগানোর পাশাপাশি ত্বককে নরম রাখে। তবে গরমের সময় ওয়াটার বেজ ময়েশ্চারাইজার বেছে নিলে ত্বকের যত্নে ভাল হয়।

ত্বক পরিষ্কার রাখুন

সকালে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। যদি এমন হয় সারা দিন বাইরে বের হননি তবুও রুটিন করে ত্বক পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।

এক্সফোলিয়েট করুন

গরমের সময় ত্বকের মরা কোষ দূর করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা দরকার। কারণ এ সময় ধুলাময়লা জমে ত্বক অপরিচ্ছন্ন হয় বেশি। চার-পাঁচ চামচ বেসনের সাথে এক চামচ হলুদ, পাঁচ-ছয় ফোঁটা গোলাপজল ও দুধ মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। আধঘণ্টা পর ঘষে ঘষে তুলে ফেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

রোদ এড়িয়ে চলুন

বেসন ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে খুব কার্যকর। বেসনের সাথে টক দই ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রেখে। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। রোদে পোড়া দাগ দূর করতে লেবুর রস ভালো কাজ করে। পেঁপে প্রাকৃতিক কিনজার হিসেবে ভালো কাজ করে। তাই ত্বক পরিষ্কার করতে দুই টেবিল চামচ চটকানো পেঁপের সাথে এক চা চামচ মধু ও একটা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বককে শীতল রাখুন

গরমে ত্বক শীতল রাখা খুব প্রয়োজন। এক টেবিল চামচ কোরানো শসার সাথে এক টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। খুবই সতেজ অনুভব করবেন। এ ছাড়া পুষ্টিকর খাবার, ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম ত্বক ভালো রাখার জন্য খুবই জরুরি।

সুষম খাদ্য গ্রহণ

খাদ্যতালিকায় শর্করা বেশী রেখে আমিষ আর চর্বি জাতীয় খাবার কমালে ভাল। প্রচুর সবুজ শাক-সবজী, গাজর, লেটুস, সালাদ খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন এক কাপ খাটি দুধ পান শরীর থেকে তাপ কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত গরম এবং ঝাল জাতীয় খাদ্য বর্জন করবেন।

লেবুর শরবত খান

গরমে লেবুর শরবত হতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এক চমৎকার পানীয়। শরবতে একটু লবণ ও চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। চিনি শক্তি জোগাবে, আর লবণ পূরণ করবে আপনার শরীর থেকে ঘামের সাথে বেরিয়ে যাওয়া লবণের অভাবটুকু। লেবুতে থাকে ভিটামিন সি। এই গরমে ভিটামিন সি ফিরিয়ে দেবে আপনার লাবণ্যতা।

ঘরটাকে ঠাণ্ডা রাখুন

লোডশেডিংয়ের ঝামেলায় দুঃসহ গরমে আপনার ঘর ঠাণ্ডা রাখার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। দরজা-জানালায় সাদা রঙের পর্দা টানান, যাতে বাইরে থেকে ঢুকতে না পারে সূর্যের তীব্র আলো। মেঝেতে ঠাণ্ডা পানি ঢালুন। পর্দাগুলোও ভিজিয়ে দিন পানি দিয়ে। আপনার ঘরের মাথার ছাদেও পানি ঢালার ব্যবস্থা করলে ভাল হবে। ছাদের ওপরে ছাদজুড়ে শামিয়ানা টানিয়ে নিতে পারেন।

মৌসুমী ফল গ্রহণ

গরমের সময় প্রচুর মৌসুমী ফল খাওয়া যেতে পারে যেমন- তরমুজ, আম, বাংগী, আঙ্গুর। এসব সরাসরি ত্বকের পুষ্টি যোগায় এবং ত্বকের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। সুতরাং গরমে মৌসুমি ফল বেশি করে খাবেন।

গরমে চুল সুন্দর রাখতে প্রয়োজনীয় টিপস

  • সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু করতে হবে।
  • রাতে ভাল করে তেল ম্যাসাজ করতে হবে।
  • গরমে চুলের ডগা ফেটে যাওয়া, রোদে পোড়ার হাত থেকে রেহাই পেতে হলে গরমের শুরুতেই চুল ট্রিম করিয়ে নিতে হবে।
  • চুল ছোট না করতে চাইলে টুপি ব্যবহার করতে পারেন, স্কার্ফ বা ক্লিপ দিয়ে চুল বেধেও রাখতে পারেন। তবে বেশি টাইট করে চুল বাধবেন না, খেয়াল রাখবেন চুলের মধ্যে যেন হাওয়া চলাচল করতে পারে।
  • ধুলো-ময়লা, বৃষ্টির পানিতে ভিজে অনেক সময় চুল নিস্তেজ হয়ে যায়। অলিভ অয়েল, নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েলের সাথে মেথি পেস্ট মিশিয়ে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে চুল ঘন ও উজ্জ্বল থাকবে।
  • দইয়ের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে দিতে পারেন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
  • বাইরে বেরোনোর সময় চুল বেঁধে রাখতে হবে। তাহলে বাইরের রোদ ময়লা থেকে অনেক খানি রক্ষা পাবেন।
  • গরমে তাপমাত্রা বাড়লে মাথার তালুও ঘামতে শরু করে। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে চুল ভাল করে শুকিয়ে নিবেন। তারপর বড় দাতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে শুকিয়ে নিবেন।
  • নারকেল তেলের সাথে দারুচিনি গুঁড়া করে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলেও চুল পড়া কমে যাবে।
  • আরও মনে রাখতে হবে ঘুমানোর আগে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে হালকাভাবে চুল আঁচড়ে নিবেন। এতে চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হবে।
  • চুলপড়া রোধ করতে লাইফ স্টাইল ও ডায়েটেও পরিবর্তন আনা দরকার। অর্থাৎ ব্যালেন্সড ডায়েট মেনে চললে এবং সবুজ শাকসবজি, ফলমূল বেশি খেলে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যাবে। বেশি করে প্রোটিনযুক্ত খাবার ও প্রচুর পানি পান করতে হবে।

প্রচন্ড গরমে আমাদের উচিত প্রতিদিন কিছুটা সময় ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া। আর এভাবে নিয়মিত ত্বক ও চুলের যত্ন নিলে দেখবেন গরমে আপনার চুল থাকবে প্রাণবন্ত ঝলমলে সাথে ত্বকেরও উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে। লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter)!!

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার(Dark matter) ! লিখেছেন : হিমাংশু কর সেপ্টেম্বর 26, 2018 সৃষ্টিতত্ত (cosmology) ও মহাবিশ্বের দুরতম অঞ্চলগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পেরেছি।এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা।এ ছাড়াও আলোর গতির সীমাবদ্ধতার কারনেও আমরা এ সকল অঞ্চলগুলো সম্পর্কে এখনো ভাল মত জানি না।তবে আমাদের অর্জন ও কম না।আমরা ইতিমধেই আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ অভিযান এর জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছি।এও বা কম কি?তবে যাই হোক সে আলোচনা আর বাড়াবো না।এবার আমরা লক্ষ করব গ্যালাক্সিগুলোর দিকে।নিউটনের মহাকর্ষ বলের( gravitational force ) সুত্রগুলি যদি আমারা গ্যালাক্সিগুলোর উপর প্রয়োগ করি , তাহলে দেখা যাবে যে, গ্যালাক্সিগুলোর চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে পরার কথা।কিন্তু আমরা জানি গ্যালাক্সি বা তারকাপুঞ্জের ভেতরের বস্তুগুল একটি কেন্দ্রিয় বিন্দুর উপর নির্ভর করে ঘুরতেছে।কারন তাদের পারস্পারিক আকর্ষণ এক ধরনের কন্দ্রাতিক(centripetal) শক্তির সৃষ্টি করে থাকে।অবাক হবার কথা হল হিসাব করে দেখা গেছে এ ধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি করার মত পর্যাপ্ত বস্তু এসব গ্যালাক্সিগুলোর নেই।এই ব্যাপারটি ১৯৭০ এর দশকে ওয়াশিংটন ডি...

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্প - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - এক বনে ছিল এক হিংস্র বাঘ। সে যেকোনো প্রাণীকে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তো। কাউকে সে মানতো না। একদিন এক নিরীহ হরিণ সেই বাঘের কবলে পড়লো। হরিণটা অনেক যুদ্ধ করেও পালাতে পারলো না। বাঘ মাত্র ওকে সুবিধামতো কামড় বসাবে। এমন সময় হরিণের মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। হরিণ বলল, “ওহে বাঘ। তুমিতো সবাইকেই খাও। আমায় না হয় ছেড়ে দাও। আমার মাংস খেলে তোমার একটুও পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং বিনিময়ে আমি তোমাকে অনেকগুলো গরু দিবো। তা দিয়ে এক মাস চলে যাবে তোমার।” বাঘ কথাটা শুনে ভেবে দেখল কথাটাতো মন্দ না। তাই সে হরিণটাকে ছেড়ে দিল। পরে হরিণ চলে গেল সেখান থেকে। আর বাঘ তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু চালাক হরিণকে আর পায় কে? হরিণতো তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জীবনে রক্ষা পেল। তাই গায়ের জোর না থাকলেও বুদ্ধির জোর সবচেয়ে দামি। এই গল্প থেকে আমরা অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি: 1। কাউকে সহজেই বিশ্বাস করা ঠিক না। সহজেই বিশ্বাস করাটা বোকামি। 2। বিপদে পড়লে ভয় না পেয়ে বরং ভয়টাকে জয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 3। গায়ের শক্তি না থাকলেও বুদ্ধির জোর দিয়ে ...

বাসর রাত- ভালোবাসার গল্প

বাসর রাত সেপ্টেম্বর 25, 2018 গল্প লিখেছেন :  কাল্পনিক বাসর ঘরে ঢুকেই নববধূকে বললাম ‘ ফ্রেশ হয়ে আস। মুখের আটা-ময়দা দেখে বলতে পারবনা তুমি চাঁদের মত সুন্দর’ নববধূ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। তারপর বলল ‘বিয়ের আগে আমাকে দেখেননি?’ আমি মুখ বাঁকা করে বললাম ‘হ্যাঁ একবার তো দেখেছিলাম কিন্তু সেদিন আরো বেশি আটা-ময়দা ছিল’ নববধূ আমার দিকে যেভাবে তাকাল মনে হচ্ছে আমাকে চিবিয়ে খাবে। তারপর খাট থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাবার জন্য পা বাড়াল। আমি বললাম ‘তোমার নামটা যেন কি?’ নববধূ ভেংচি দিয়ে বলল ‘বাহ মাত্র একদিনে নামটাই ভুলে গেলেন? কালকে তো মনে হয় বলবেন “এই মেয়ে তুমি এ বাড়িতে কি কর” ‘ আমি জোর স্বরে বললাম ‘নামটা জিজ্ঞেস করেছি আর এত কথা শুনিয়ে দিলে। এত বেশি কথা মেয়েদের মুখে মানায় না।’ নববধূ ‘ইরা’ বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। . আমি বসেবসে হাসছি। আয়নার সামনে গিয়ে হাসছি। এরকম যন্ত্রণা মনে হয় বাসর রাতে কোন মেয়ে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে প্যারা ঘরে আবার আসল। এবার চোখেমুখে লজ্জা দেখতে পাচ্ছি। আটা-ময়দা ছাড়া তো ভালই দেখাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরবে মনে হয়। আমি বললাম ‘মিসেস প্যারা আপনাকে আটা-ময়দা ছ...