Skip to main content

ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন

ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন



বহু বছর আগে থেকেই মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিসপত্র লেনদেন করে আসছে। লেনদেনের সবচেয়ে প্রাচীন এবং অধিক প্রচলিত প্রথার মধ্যে অন্যতম ছিলো বিনিময় প্রথা। কিন্তু মানদন্ডের বিচারে সেখানে বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছেন। ধরা যাক, ফল ব্যবসায়ী শফিক সাহেবের একবস্তা চাল লাগবে এবং বিনিময়ে তাকে এক বস্তা তুলা দিতে হবে। কিন্তু শফিক সাহেবের কাছে কোন তুলা নেই। যেহেতু শফিক সাহেবের কাছে কোন তুলা নেই, তাহলে এখানে বিনিময় কার্য সম্পন্ন হতে পারছেনা।
বিনিময় প্রথার এই সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়ার লক্ষ্যে সবাই এমন একটা প্রথা উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো, যেখানে সব ধরণের পণ্যের একটা আদর্শ মূল্য থাকবে। উদাহরণ হিসেবে গোল্ডের কথা বলা যেতে পারে। অনেক বছর আগে থেকে এখনো গোল্ডকে সম্পদ পরিমাপের একটা একক হিসাবে ধরা হত। আগে সরাসরি গোল্ড লেনদেন হত, সেটা একসময় মানুষের প্রয়োজনমত কাগজের মুদ্রা ব্যাবস্থায় রূপ নেয়।
এভাবে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রা যেমন, টাকা, ডলার, পাউণ্ড, ইউরো ইত্যাদি এসেছে। দেশের অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই মুদ্রা ছেপে বাজারে ছাড়তে পারে মানুষের ব্যবহারের জন্য। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন বা সম্পদ আদান প্রদান সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো দেশের আইন অনুযায়ী সামলানোর জন্য তৈরি হয়েছে ব্যাংক বা ব্যাংকিং সিস্টেম। কিন্তু এতে করেও সমস্যার সমাধান হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে বড় বড় ব্যাংক ডাকাতির ভয়াবহ গল্পগুলো শুনলে কার না হৃদয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়! তবুও সময় বয়ে যায়, আর মানুষ ও দমে যাবার পাত্র নয়। নিজের প্রয়োজনে তারা আবিষ্কার করে একের পর এক বিস্ময়। আজকে আমরা তেমনি এক বিস্ময়ের কথা বলবো।
বর্তমানে প্রচলিত নানান মূদ্রা
বর্তমানে প্রচলিত নানান মূদ্রা
মূল আলোচনায় যাবার আগে আমরা একটা কাল্পনিক দৃশ্যপট কল্পনা করার চেষ্টা করবো।
খুব ছোটবেলা থেকে আপনার অনেক ধরণের শখ আছে। এর মধ্যে অন্যতম শখ হচ্ছে আর্ট এন্ড কালচার। অর্থাৎ এই আধুনিকায়ন সভ্যতায় বসে আপনার দুষ্প্রাপ্য চিত্রকর্মের প্রতি বিশেষ আগ্রহ আছে। খুব ছোটবেলা থেকে সংগ্রহ করছেন। তাই নিজের এত বছরে সংগ্রহ করা চিত্রকর্ম নিয়ে আপনার ছোটখাটো একটা মিউজিয়াম আছে। কথায় আছে শখের তোলা ৮০, এর জন্য মূল্য ও দিতে হয় অনেক। এসব জিনিস সংগ্রহ করা এবং নিজের সংগ্রহে রাখা দুইটারই ঝামেলা অনেক। কারন এসবের উপর নানা ধরনের লোকজনের নজর থাকে, অনেক সময় এগুলো নিয়ে বড় ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ কিংবা দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রায় শেষের দিকে অথবা চাকরি নিয়ে বেশ ব্যস্ত কিংবা এখন আর আগের মতো পেইন নিতে চান না, আবার শখের জিনিষ ছাড়তে ও চান না। তাই বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছেন এমন কোন উপায় নিয়ে যা দিয়ে সংগ্রহের সকল আর্টগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করা যায় যেন,
  • প্রথমেই পণ্যের গুণগত মান নিশ্চায়ন করা।
  • আর্থিক লেনদেন এবং আইনগত ব্যাপারগুলো বাড়িতে বসে, বিনা ঝামেলায়, নীরবে এবং স্বল্পতম সময়ে করে ফেলা।
  • বিক্রয় করার সময় একটি স্বচ্ছ লেনদেন প্রক্রিয়া।
  • পণ্যের কঠোর নিরাপত্তা।
অর্থাৎ যদি কোন চোর কোনক্রমে আপনার কোন আর্ট চুরি করে বাইরে বিক্রি করতে যায়, তাহলে যেন সে চোরাই জিনিস বিক্রির দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং চোর যদি পালিয়েও যায়, যে সেটা কিনেছে সে ধরা পড়ে চোরাই জিনিস কেনার অপরাধে।
বিনিময় প্রথা তো আর আপনার এই চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু ব্যাংকিং ব্যবস্থা চাইলেই আপনার এই সমস্যা দূর করতে পারে। কিন্তু ঐ যে বললাম বড় বড় ব্যাংক ডাকাতির করুণ ইতিহাসের কথা। অন্যদিকে আপনি যে ধরণের আর্থিক নিরাপত্তা ও ব্যাংকগুলো এই মুহূর্তে দিতে পারছে না।
আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি সেই সাপেক্ষে ব্যাংকের ভূমিকা  একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করি।
আপাতত আমরা এখানে ব্যাংকের গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করি। ধরে নিচ্ছি, আপনি আপনার চিত্রকলা সম্পর্কিত কোন কাজের জন্য মিসরের কোন এক পত্নতাত্ত্বিক ব্যবসায়ীর কাছে টাকা পাঠাবেন। তো আপনি জানেন কিংবা শুনেছেন যে প্রায় সময় তারা টাকা নিয়ে অনেক ধরণের অনৈতিক পথের আশ্রয় নেয়। তাই আপনি তাদের  টাকা দিতে ঠিক ভরসা পাচ্ছেন না। যদি টাকা নিয়ে সে ব্যবসায়ী অস্বীকার করে! সুতরাং এক্ষেত্রে  আপনার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান লাগবে যেখানে আপনি স্বাচ্ছন্দে টাকা আদান-প্রদান করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার অ্যাকাউন্টের টাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিসরের সেই ব্যক্তির  অ্যাকাউন্টে যাবে, এবং প্রতিষ্ঠানটি সেই লেনদেনের রেকর্ড রাখবে যাতে এই লেনদেন নিয়ে দুইজনের কেউ কোন প্রশ্ন না তুলতে পারে। এই মাঝখানের প্রতিষ্ঠানটি হল ব্যাংক।
কেমন হতো যদি আপনি  তৃতীয় কোন পক্ষ কিংবা ব্যাংকের আশ্রয় না নিয়ে কোন উপায়ে মিসরের সেই ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে পারতেন? এখানে আমরা মূলত একটি প্রসেস নিয়ে চিন্তা করছি যা একটি ব্যাংকের চাইতে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কোন অর্থ লেনদেন নিশ্চিত করবে। এমনকি সেই সিস্টেমে থাকবে না হ্যাংকি কিংবা কোন ধরণের লুটপাটের সম্ভাবনা।
আসলে এই প্রযুক্তির নাম হল ব্লকচেইন, যাকে বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তিবিদ ভবিষ্যতের ব্যাংকিং টেকনোলজি হিসাবে দেখছেন এবং কিছু প্রভাবশালী দেশের কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে এই প্রযুক্তির পেছনে। ব্লকচেইন সিস্টেম এবং সেটার জন্য প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন ডিজাইন ও ডেভেলপ করেন যিনি তার নাম সাতোশি নাকামোতো। 'যিনি' কথাটা এখানে সম্ভবত ঠিক নয়, কেননা সাতোশি নাকামতোর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এটা হতে পারো কোন ব্যাক্তি, গোষ্ঠি, প্রতিষ্ঠার বা কোম্পানির কোডনেম। 
এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিকই ছিলো। এখন নিশ্চইয় ভাবছেন এই ব্লকচেইন আবার কি! তাহলে চলুন ব্লক চেইন নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

ব্লকচেইন কি?

মোটামুটি নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী জুড়ে যত অর্থের বা সম্পদের লেনদেন হচ্ছে সেই লেনদেনের সকল এনক্রিপটেড তথ্য একসাথে নিয়ে একটা ব্লক বানানো হয়। সেই ব্লক দিয়ে ক্রমানুসারে সাজানো সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয় একটা ডিস্ট্রিবিউটেড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড লেজারকেই মূলত ব্লকচেইন বলা হয়। কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে সব কিছু, তাইনা! বিটকয়েন কে আমরা এখন অনেকেই চিনি। এখানে আমরা যে ব্লক চেইনের কথা বলছি তার একটা উদাহরণ হচ্ছে বিটকয়েন ব্লকচেইন। বিটকয়েন একটা ক্রিপ্টোকারেন্সি যা কোন একটা ব্লকচেইন ব্যবহার করে পরিচালিত হয়।
ব্যাংকের যাবতীয় লেনদেন রেকর্ড করার জন্য সকল শাখায় একটা বড় সাইজের খাতা থাকে। আর যে ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে, তাদের এই রেকর্ড থাকে ডেটাবেইজে। হয়তো, সেই পুরানো খাতাতেও থাকে। এই বড় সাইজের খাতাটাকে বলে লেজার। তো একটা ভ্যালিড ট্রানকেজশানের জন্য অবশ্যই ব্যাংকের লেজারে সেটার এন্ট্রি থাকতে হবে। ব্লকচেইন এরকম একটা লেজার, যেখানে পাশাপাশি একটার পর একটা এরকম অনেকগুলো ব্লক থাকে। প্রত্যেকটা ব্লকের ভিতর থাকে একটা সময়ে মাঝে সারা পৃথিবীতে যত ট্রানজেকশান হয়েছে সেটার সকল ডেটা। এই ডেটা ওপেন কিন্তু এনক্রিপ্টেড অর্থাৎ সবাই দেখতে পারবে এই ডেটা কিন্তু পড়তে গেলে প্রাইভেট কী লাগবে। অর্থাৎ আপনি যদি এখানে ট্রাঞ্জেকশান করে থাকেন তাহলে শুধুমাত্র আপনি এখান থেকে আপনার ট্রানজেকশনের সকল তথ্য সেটার প্রাইভেট কী ব্যাবহার করে পড়তে পারবেন, অন্য কেউই পারবেনা। তবে মানুষ যেটা দেখবে তা হল ট্রানজেকশনের পরিমাণ। তবে কার অর্থ কার কাছে গিয়েছে সেটা এভাবে জানা যাবেনা। কেননা শুধুমাত্র এড্রেস দিয়ে চলে যাবে টাকা। কোন পরিচয় থাকবেনা।
নিচের ছবিতে দেখা যাবে একটা ট্রানজেকশান দেখতে কেমন। ব্লকচেইনের প্রত্যেকটা ব্লক সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয়। একবার চেইনে একটা ব্লক যোগ হয়ে গেলে সেটাতে কোন প্রকারের পরিবর্তন অসম্ভব। ব্লকগুলো পাশাপাশি তাদের সৃষ্টির ক্রমানুসারে বসে। প্রত্যেকটা ব্লক তার আগে কোন ব্লক আছ সেটা জানে। এভাবে একটা ব্লকের সাথে আরেকটা কানেক্টেড। ব্লকচেইন ডিস্ট্রিবিউটেড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম, অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে বলতে গেলে একই ব্লকচেইনের সব ইউজার বা ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ ইউজারদের কাছে একেবারে কার্বন কপি আছে। কাজেই একটা বা শ-খানেক সার্ভার বা কম্পিউটার একসাথে নস্ট হয়ে গেলেও ব্লকচেইনের কিছুই হবেনা।

ক্রিপটোকারেন্সিঃ

আমাদের প্রচলিত মুদ্রার মত ক্রিপ্টোকারেন্সি ও এক প্রকার মুদ্রা বা বিনিময় মাধ্যম। অর্থাৎ প্রচলিত মুদ্রা যেমন, ডলার, পাউন্ড, টাকা ইত্যাদি দিয়ে যে কাজ করা যায়, ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়েও সেই একই কাজ করা যায়। ব্লকচেইন টেকনোলজির মাধ্যমে লেনদেনের জন্য এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা হয়। এইরকম মুদ্রা অনেক আছে, যেমন বিটকয়েন, বিটক্যাশ, মোনেরো,  লাইটকয়েন ইত্যাদি। আমাদের মুদ্রা যেমন, ডলার, পাউণ্ড, টাকা ইত্যাদির দাম বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে, এগুলোর ক্ষেত্রেও তাই, অর্থাৎ ক্রয়/বিক্রয় মূল্য ওঠানামা করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি
ক্রিপ্টোকারেন্সি
তো এতক্ষণে নিশ্চইয় বুঝতে পেরেছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি। চলুন এবার তাহলে ক্রিপ্টোকারেন্সির কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ( যেমন ধরুন, বিটকয়েন) একটি নেটওয়ার্কের মতো। প্রতিটি পিয়ারের সমস্ত লেনদেনের সম্পূর্ণ ইতিহাস এবং এইভাবে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের রেকর্ড আছে। যেমন একটি ট্রান্সজেকশন ফাইল বলছে, "শামছুল x পরিমাণ বিটকয়েন অ্যালিস্কে দেয়" এবং এটি শামছুল হকের ব্যাক্তিগর কী দ্বারা সাক্ষরিত। এটি মৌলিক পাবলিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফি। স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে একটি লেনদেন পুরো নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি এক পিয়ার থেকে অন্য পিয়ারে পাঠানো হয়। এটি মৌলিক P2P প্রযুক্তি। নিচের ইনফোগ্রাফ থেকে ধারণা পাওয়া যাবে কিভাবে ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কাজ করে। ছবিটিতে ক্লিক করলে বড় আকারে দেখঅ যাবে।
Blockchain Infographic [www.pwc.com]
Blockchain Infographic [www.pwc.com]
লেনদেনটি অতি দ্রুত সম্পন্ন হয়। তবে নির্দিষ্ট সময় পরে নিশ্চিত হয়। অনেকটা কোন একাউন্ট অ্যাকটিভ করার মাধ্যমে কনফার্ম করার মতো। এই কনফার্ম বা নিশ্চিতকরণ ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ লেনদেন অনিশ্চিত হয় ততক্ষণ, এটি মুলতুবি আছে এবং জাল করা হতে পারে। যখন একটি লেনদেন নিশ্চিত করা হয়, এটি পুরোপুরিভাবে লেজারে সেট করা হয়। এটিকে আর সংশোধন করা যাবেনা, মুছে ফেলা যাবে না। অর্থাৎ লেজারের তথ্য আর আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। এই প্রসেসটিই মূলত ব্লকচেইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা আগেই আলোচনা করা হয়েছে।
শুধুমাত্র মাইনাররা ট্রানজেকশন নিশ্চিত করতে পারবেন। মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্কে এটিই মাইনারদের কাজ। তারা ট্রানজেকশন গ্রহন করে, লেজারে জমা রাখার পর নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়। যখনি মাইনার কর্তৃক ট্রানজেকশন নিশ্চিত করা হয়, তখনি সেটা অপরিবর্তনীয় ব্লকচেইনের অংশ হয়ে যায়। এই কাজের জন্য মাইনাররা ক্রিপ্টোকারেন্সির টোকেন (ফী বলা যায়) লাভ করে (যেমন: বিটকয়েন)। যেহেতু মাইনরদের কার্যকলাপ ক্রিপ্টোকুরেন্স-সিস্টেমের একক সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাই আমরা মাইনরদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
প্রচলিত সকল মুদ্রার নিয়ন্ত্রক হল কোন দেশের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি হোক বা আমেরিকার মত প্রাইভেট হোক, দেশের অর্থনীতি এবং আরও অন্যান্য কিছু বিষয় বিবেচনা করে নতুন কারেন্সি তৈরি করতে পারে। সোজা বাংলায় নতুন 'ব্যাংক নোট' ছাপতে দিতে পারে। অর্থাৎ সেটা নিয়ন্ত্রকেরা নিজেদের ইচ্ছামত করতে পারে, কার লাভ কার ক্ষতি সেটা নিয়ে তাদের মাথা না ঘামালেও তাদের চলে অনেকসময়। যেমন, আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা ছাপা হওয়ার কারনে আমাদের মুদ্রাস্ফীতি আছে।
কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরি হয়। এখানে নতুন কারেন্সি বা বিটকয়েন আসে প্রতি ১০ মিনিটে একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক পাজল সমাধান করার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। আর এই পাজল প্রতিযোগিতাই হয় মাইনারদের মাধ্যমে।
যারা এনক্রিপশান সম্পর্কে জানে, তাদের কাছে SHA256 এনক্রিপশান পরিচিত হওয়ার কথা। যারা পরিচিত না, এটুকু জানলেই হবে, যে কোন ডেটাকে SHA256 এ যদি এনক্রিপ্ট করা হয় তাহলে ওই ডেটার জন্য একটা হ্যাশ পাওয়া যায়। হ্যাশ হল বোঝার সুবিধার্থে, "000001beeca3785d515897041af0a7" এরকম কিছু একটা। এখন এই ডেটা থেকে যদি অতি সামান্য কোন কিছুও পরিবর্তন হয়, তাহলে একটি ভিন্ন হ্যাশ পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এভাবে এনক্রিপ্ট করলে নির্দিষ্ট একটা ডেটার জন্য হ্যাশ সর্বদা একই হবে, এবং সবার কম্পিউটারেই একই হবে।
এখন লক্ষ করি, উপরে যে হ্যাশটা আমি ব্যবহার করেছি ওখানে শুরুতে ৫টা জিরো আছে। এটা ইচ্ছাকৃত। এবং এটাই সেই ক্রিপটোগ্রাফিক পাজল যেটার কথা একটু আগে বলেছি। প্রতি মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে বিটকয়েনের ব্লকচেইনে অসংখ্য লেনদেন চলছে। ব্লকচেইনে নতুন একটা ব্লক যোগ হওয়ার পর থেকে আনুমানিক ১০ মিনিট ধরে পেন্ডিং ট্রানজেকশনের ডেটা বিটকয়েন সিস্টেমের সকল মাইনারদের কম্পিউটারে জমতে থাকে। তো কথা হচ্ছে মাইনার মানে আমরা নিজেরা এবং আমরা কম্পিউটার নিয়ে বসে আছি পাজল সমাধান করার জন্য।
এখন আমাদের বা মাইনারদের টার্গেট হল, যে ডেটা আমাদের কাছে এই মুহূর্তে আছে সেটা, আগের ব্লকের হ্যাশ এবং তার সাথে আরেকটা Random Number (এখানে একে Nonce = Number Used Once বলা হয়) মিলিয়ে উপরের মত শুরুতে ৫টা জিরো আছে এরকম প্যাটার্নের একটা হ্যাশ খুঁজে বের করা। এই ৫টা জিরো কেন? এটাকে বলা হয়, ডিফিকাল্টি লেভেল, অর্থাৎ শুরুতে কয়টা জিরো বসবে সেটা আসলে পাজলটা সমাধান করা কত কঠিন সেটা নির্দেশ করে।
এভাবে মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার মাইনার তাদের কম্পিউটারে সেই কাঙ্ক্ষিত হ্যাশ খুঁজে বের করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এই প্রসেস আসলে কোন বিশেষ অ্যালগরিদম বা বুদ্ধি দিয়ে জেতা যাবেনা। একেবারে বাংলা পদ্ধতিতে একটার পর একটা Nonce বা এক্সপ্রেশন প্রয়োগ করে চেক করতে হবে সেই প্যাটার্নের হ্যাশ পাওয়া গেল কিনা।
এই প্রতিযোগিতায় যে মাইনার সবার আগে এই হ্যাশ খুঁজে বের করতে পারে যে জয়ী। হ্যাশ খুঁজে পাওয়া মানে হল, নতুন একটা ব্লকচেইনের জন্য নতুন একটা ব্লক তৈরি হওয়া। চমৎকার না? বাকি মাইনার যারা জিততে পারলোনা তাদের কাজ হল, বিজয়ী মাইনারের রেজাল্ট সঠিক কিনা সেটা ভেরিফাই করা। এভাবে সম্ভবত ৫১.৭% মাইনার ভেরিফাই করে দিলে তখন, নতুন ব্লকটা একটা পরীক্ষিত বা সঠিক ব্লক হিসাবে ব্লকচেইনে যোগ হয়ে যায়।
বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে তার একটা ভিজুয়াল আইডিয়া নিচের ভিডিও থেকে পাওয়া যেতে পারে।
বাংলায় ব্লকচেইন নিয়ে যত লিখা আছে তার মাঝে মিডিয়ামের ব্লকচেইন এ ভবিষ্যৎ! লিখাটি সবচেয়ে বেশি সহজ এবং ভালো বলে মনে হয়েছে আমার। সকল তথ্য খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অবশ্যপাঠ্য!
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অনেক আলোচনা করা হলো।ক্রিপ্টোকারেন্সির অনেক ধরণের প্রকারভেদ আছে।যদি বিটকয়েন অধিক ব্যবহৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি।এছাড়াও অনেক ধরণের ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে।
অন্যদিকে ক্রিপ্টোকারেন্সির সিকিউরিটি নিয়েও অনেকের সন্দেহ থাকতে পারে। বাকী সব ক্রিপ্টোকারেন্সি, ক্রিপ্টোকারেন্সির নিরাপত্তা এবং ভবিষৎ নিয়ে আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে। সবাইকে সেই পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানেই শেষ করছি।
রেফারেন্সঃ 
১) https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cryptocurrency
২) https://blockgeeks.com/guides/what-is-cryptocurrency/
৩) https://www.iayon.com/blockchain-bitcoin/

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter)!!

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার(Dark matter) ! লিখেছেন : হিমাংশু কর সেপ্টেম্বর 26, 2018 সৃষ্টিতত্ত (cosmology) ও মহাবিশ্বের দুরতম অঞ্চলগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পেরেছি।এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা।এ ছাড়াও আলোর গতির সীমাবদ্ধতার কারনেও আমরা এ সকল অঞ্চলগুলো সম্পর্কে এখনো ভাল মত জানি না।তবে আমাদের অর্জন ও কম না।আমরা ইতিমধেই আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ অভিযান এর জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছি।এও বা কম কি?তবে যাই হোক সে আলোচনা আর বাড়াবো না।এবার আমরা লক্ষ করব গ্যালাক্সিগুলোর দিকে।নিউটনের মহাকর্ষ বলের( gravitational force ) সুত্রগুলি যদি আমারা গ্যালাক্সিগুলোর উপর প্রয়োগ করি , তাহলে দেখা যাবে যে, গ্যালাক্সিগুলোর চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে পরার কথা।কিন্তু আমরা জানি গ্যালাক্সি বা তারকাপুঞ্জের ভেতরের বস্তুগুল একটি কেন্দ্রিয় বিন্দুর উপর নির্ভর করে ঘুরতেছে।কারন তাদের পারস্পারিক আকর্ষণ এক ধরনের কন্দ্রাতিক(centripetal) শক্তির সৃষ্টি করে থাকে।অবাক হবার কথা হল হিসাব করে দেখা গেছে এ ধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি করার মত পর্যাপ্ত বস্তু এসব গ্যালাক্সিগুলোর নেই।এই ব্যাপারটি ১৯৭০ এর দশকে ওয়াশিংটন ডি...

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্প - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - এক বনে ছিল এক হিংস্র বাঘ। সে যেকোনো প্রাণীকে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তো। কাউকে সে মানতো না। একদিন এক নিরীহ হরিণ সেই বাঘের কবলে পড়লো। হরিণটা অনেক যুদ্ধ করেও পালাতে পারলো না। বাঘ মাত্র ওকে সুবিধামতো কামড় বসাবে। এমন সময় হরিণের মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। হরিণ বলল, “ওহে বাঘ। তুমিতো সবাইকেই খাও। আমায় না হয় ছেড়ে দাও। আমার মাংস খেলে তোমার একটুও পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং বিনিময়ে আমি তোমাকে অনেকগুলো গরু দিবো। তা দিয়ে এক মাস চলে যাবে তোমার।” বাঘ কথাটা শুনে ভেবে দেখল কথাটাতো মন্দ না। তাই সে হরিণটাকে ছেড়ে দিল। পরে হরিণ চলে গেল সেখান থেকে। আর বাঘ তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু চালাক হরিণকে আর পায় কে? হরিণতো তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জীবনে রক্ষা পেল। তাই গায়ের জোর না থাকলেও বুদ্ধির জোর সবচেয়ে দামি। এই গল্প থেকে আমরা অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি: 1। কাউকে সহজেই বিশ্বাস করা ঠিক না। সহজেই বিশ্বাস করাটা বোকামি। 2। বিপদে পড়লে ভয় না পেয়ে বরং ভয়টাকে জয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 3। গায়ের শক্তি না থাকলেও বুদ্ধির জোর দিয়ে ...

বাসর রাত- ভালোবাসার গল্প

বাসর রাত সেপ্টেম্বর 25, 2018 গল্প লিখেছেন :  কাল্পনিক বাসর ঘরে ঢুকেই নববধূকে বললাম ‘ ফ্রেশ হয়ে আস। মুখের আটা-ময়দা দেখে বলতে পারবনা তুমি চাঁদের মত সুন্দর’ নববধূ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। তারপর বলল ‘বিয়ের আগে আমাকে দেখেননি?’ আমি মুখ বাঁকা করে বললাম ‘হ্যাঁ একবার তো দেখেছিলাম কিন্তু সেদিন আরো বেশি আটা-ময়দা ছিল’ নববধূ আমার দিকে যেভাবে তাকাল মনে হচ্ছে আমাকে চিবিয়ে খাবে। তারপর খাট থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাবার জন্য পা বাড়াল। আমি বললাম ‘তোমার নামটা যেন কি?’ নববধূ ভেংচি দিয়ে বলল ‘বাহ মাত্র একদিনে নামটাই ভুলে গেলেন? কালকে তো মনে হয় বলবেন “এই মেয়ে তুমি এ বাড়িতে কি কর” ‘ আমি জোর স্বরে বললাম ‘নামটা জিজ্ঞেস করেছি আর এত কথা শুনিয়ে দিলে। এত বেশি কথা মেয়েদের মুখে মানায় না।’ নববধূ ‘ইরা’ বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। . আমি বসেবসে হাসছি। আয়নার সামনে গিয়ে হাসছি। এরকম যন্ত্রণা মনে হয় বাসর রাতে কোন মেয়ে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে প্যারা ঘরে আবার আসল। এবার চোখেমুখে লজ্জা দেখতে পাচ্ছি। আটা-ময়দা ছাড়া তো ভালই দেখাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরবে মনে হয়। আমি বললাম ‘মিসেস প্যারা আপনাকে আটা-ময়দা ছ...