Skip to main content

আগুন! আগুন! আগুন! কি এই আগুন???

আগুন! আগুন! আগুন! কি এই আগুন???

আগুন কি?

এটা কি তরল, কঠিন, নাকি গ্যাসীয় পদার্থ?
আগুন
থাক, আপনাদেরকে আর বেশি চিন্তা করতে না বলে আমি নিজেই এ সম্পর্কে কিছু প্যাঁচাল পাড়ার চেষ্টা করি।
প্রাচীন গ্রীক অ্যালকেমিস্টরা আগুনকে একটি মৌল পদার্থ ভাবতো। তারা মাটি, বায়ু, পানিকেও মৌল উপাদান হিসেবে বিবেচনা করতো। কিন্তু মৌল পদার্থের আধুনিক সংজ্ঞা থেকে আমরা জানি, এগুলোর কোনোটিই মৌল নয়, বরং এরা বিভিন্ন মৌলের সমন্বয়ে গঠিত।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, আগুন হলো উত্তপ্ত গ্যাসের মিশ্রণ। এটি সৃষ্টি হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে, যা প্রধানত বাতাসের মধ্যকার অক্সিজেন এবং বিভিন্ন ধরণের জ্বালানীর মধ্যে সংঘটিত হয়। এসব বিক্রিয়ার উৎপাদ হিসেবে কার্বন ডাই অক্সাইড, বাষ্প, আলো, তাপ প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
যখন তাপ বাড়তে থাকে, তখন জ্বালানীতে উপস্থিত কার্বন অথবা অন্যান্য মৌলের পরমাণুসমূহ আলো বিকিরণ করে। এই “তাপ দ্বারা আলো উৎপাদন প্রক্রিয়া”-কে incandescence বা তাপোজ্জ্বলতা বলা হয় এবং এই প্রক্রিয়াতেই একটি লাইট বাল্বে আলোর সৃষ্টি হয়। এ কারণেই জ্বালানীর বিক্রিয়ার ফলে অগ্নিশিখা দৃশ্যমান হয়।
যদি অগ্নিশিখা যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়, তবে গ্যাসীয় পরমাণুগুলো আয়নাইজড হয়ে পড়ে এবং তা পদার্থের অন্য একটি অবস্থায় চলে যায়। যা প্লাজমা নামে পরিচিত।
অগ্নিশিখার রঙের তারতম্য নির্ভর করে কি দহন করা হচ্ছে এবং তা কেমন উত্তপ্ত হয়েছে তার উপর। রঙের তারতম্য প্রধানত অসম তাপমাত্রার কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত আগুনের সবচেয়ে উত্তপ্ত অংশ এর বেইস, যা নীল রঙের আলো বিকিরণ করে। সবচেয়ে শীতল অংশ হলো অগ্নিশিখার শীর্ষ যা লালচে-কমলা বা হলদে-কমলা হয়ে থাকে।
ছোটবেলায় আমরা অনেকেই প্রায়ই আগুন নিয়ে খেলা করতাম। মানে, অগ্নিশিখার উপরে আঙ্গুল নাড়ানো দেখিয়ে অনেককেই অবাক করার চেষ্টা করতাম। আসলে আমরা আগুনের এই লালচে-কমলা শিখার উপর দিয়ে আঙ্গুল নাড়াতাম। কিন্তু তেমন একটা উত্তাপ অনুভূত হতনা। তবে অগ্নিশিখার নীলাভ অংশে আঙ্গুল ভুলক্রমেও চলে গেলে উত্তাপ বেশি লাগত।
আগুনের সবচেয়ে শীতল ও উত্তপ্ত অংশ
আগুনের এই শিখার আকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে অনেকাংশেই। এর মধ্যবর্তী উত্তপ্ত গ্যাসসমূহের ঘনত্ব তাকে ঘিরে থাকা বায়ুর চেয়ে অনেক কম। কিন্তু এদের তাপমাত্রা পারিপার্শ্বিক বায়ুর তুলনায় অনেক বেশী। তাই গ্যাসগুলো অধিক ঘনত্বের এলাকা থেকে কম ঘনত্বের এলাকার দিকে যেতে থাকে। মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণেই এমনটি ঘটে থাকে।
তাই অগ্নিশিখা সাধারণত ঊর্ধ্বাভিমুখী ছড়ায়, এ কারণেই দেখবেন, এর মাথা সবসময় সূঁচালো হয়।
আমরা যদি শূন্য অভিকর্ষ পরিবেশে, যেমন মহাকাশে স্পেস শাটলে আগুন জ্বালাই, তাহলে অগ্নিশিখাটি গোলাক আকৃতি ধারণ করবে!
গোলাকৃতি অগ্নিশিখা
যেমনটি দেখা যাচ্ছে নাসা কর্তৃক প্রকাশিত এই ছবিতে। নাসা কৃত্রিমভাবে মাধ্যাকর্ষণবিহীন পরিবেশ সৃষ্টি করায়, ছবিতে আমরা গোলাকৃতির অগ্নিশিখা দেখতে পাচ্ছি!
আশা করি, আগুন নিয়ে খেলা করে হলেও এ সম্পর্কে আপনাদের খানিকটা ধারণা দিতে পেরেছি।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter)!!

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার(Dark matter) ! লিখেছেন : হিমাংশু কর সেপ্টেম্বর 26, 2018 সৃষ্টিতত্ত (cosmology) ও মহাবিশ্বের দুরতম অঞ্চলগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পেরেছি।এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা।এ ছাড়াও আলোর গতির সীমাবদ্ধতার কারনেও আমরা এ সকল অঞ্চলগুলো সম্পর্কে এখনো ভাল মত জানি না।তবে আমাদের অর্জন ও কম না।আমরা ইতিমধেই আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ অভিযান এর জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছি।এও বা কম কি?তবে যাই হোক সে আলোচনা আর বাড়াবো না।এবার আমরা লক্ষ করব গ্যালাক্সিগুলোর দিকে।নিউটনের মহাকর্ষ বলের( gravitational force ) সুত্রগুলি যদি আমারা গ্যালাক্সিগুলোর উপর প্রয়োগ করি , তাহলে দেখা যাবে যে, গ্যালাক্সিগুলোর চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে পরার কথা।কিন্তু আমরা জানি গ্যালাক্সি বা তারকাপুঞ্জের ভেতরের বস্তুগুল একটি কেন্দ্রিয় বিন্দুর উপর নির্ভর করে ঘুরতেছে।কারন তাদের পারস্পারিক আকর্ষণ এক ধরনের কন্দ্রাতিক(centripetal) শক্তির সৃষ্টি করে থাকে।অবাক হবার কথা হল হিসাব করে দেখা গেছে এ ধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি করার মত পর্যাপ্ত বস্তু এসব গ্যালাক্সিগুলোর নেই।এই ব্যাপারটি ১৯৭০ এর দশকে ওয়াশিংটন ডি...

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্প - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - এক বনে ছিল এক হিংস্র বাঘ। সে যেকোনো প্রাণীকে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তো। কাউকে সে মানতো না। একদিন এক নিরীহ হরিণ সেই বাঘের কবলে পড়লো। হরিণটা অনেক যুদ্ধ করেও পালাতে পারলো না। বাঘ মাত্র ওকে সুবিধামতো কামড় বসাবে। এমন সময় হরিণের মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। হরিণ বলল, “ওহে বাঘ। তুমিতো সবাইকেই খাও। আমায় না হয় ছেড়ে দাও। আমার মাংস খেলে তোমার একটুও পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং বিনিময়ে আমি তোমাকে অনেকগুলো গরু দিবো। তা দিয়ে এক মাস চলে যাবে তোমার।” বাঘ কথাটা শুনে ভেবে দেখল কথাটাতো মন্দ না। তাই সে হরিণটাকে ছেড়ে দিল। পরে হরিণ চলে গেল সেখান থেকে। আর বাঘ তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু চালাক হরিণকে আর পায় কে? হরিণতো তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জীবনে রক্ষা পেল। তাই গায়ের জোর না থাকলেও বুদ্ধির জোর সবচেয়ে দামি। এই গল্প থেকে আমরা অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি: 1। কাউকে সহজেই বিশ্বাস করা ঠিক না। সহজেই বিশ্বাস করাটা বোকামি। 2। বিপদে পড়লে ভয় না পেয়ে বরং ভয়টাকে জয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 3। গায়ের শক্তি না থাকলেও বুদ্ধির জোর দিয়ে ...

বাসর রাত- ভালোবাসার গল্প

বাসর রাত সেপ্টেম্বর 25, 2018 গল্প লিখেছেন :  কাল্পনিক বাসর ঘরে ঢুকেই নববধূকে বললাম ‘ ফ্রেশ হয়ে আস। মুখের আটা-ময়দা দেখে বলতে পারবনা তুমি চাঁদের মত সুন্দর’ নববধূ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। তারপর বলল ‘বিয়ের আগে আমাকে দেখেননি?’ আমি মুখ বাঁকা করে বললাম ‘হ্যাঁ একবার তো দেখেছিলাম কিন্তু সেদিন আরো বেশি আটা-ময়দা ছিল’ নববধূ আমার দিকে যেভাবে তাকাল মনে হচ্ছে আমাকে চিবিয়ে খাবে। তারপর খাট থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাবার জন্য পা বাড়াল। আমি বললাম ‘তোমার নামটা যেন কি?’ নববধূ ভেংচি দিয়ে বলল ‘বাহ মাত্র একদিনে নামটাই ভুলে গেলেন? কালকে তো মনে হয় বলবেন “এই মেয়ে তুমি এ বাড়িতে কি কর” ‘ আমি জোর স্বরে বললাম ‘নামটা জিজ্ঞেস করেছি আর এত কথা শুনিয়ে দিলে। এত বেশি কথা মেয়েদের মুখে মানায় না।’ নববধূ ‘ইরা’ বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। . আমি বসেবসে হাসছি। আয়নার সামনে গিয়ে হাসছি। এরকম যন্ত্রণা মনে হয় বাসর রাতে কোন মেয়ে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে প্যারা ঘরে আবার আসল। এবার চোখেমুখে লজ্জা দেখতে পাচ্ছি। আটা-ময়দা ছাড়া তো ভালই দেখাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরবে মনে হয়। আমি বললাম ‘মিসেস প্যারা আপনাকে আটা-ময়দা ছ...