Skip to main content

রহস্যময় সিন্দুক। যা এখনো নিখোঁজ।

রহস্যময় সিন্দুক 'আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট' !



গুপ্তধনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সেই আদিম যুগ থেকে। তবে যুগে যুগে শতাব্দী থেকে শতাব্দী মানুষ যে শুধু গুপ্তধনের পিছনে ছুটে বেড়িয়েছে তা নয়। গুপ্তধন ছাড়াও প্রাচীন হারানো কোনও জিনিস, ধর্মীয় বা ঐশ্বরিক কোনও বিষয়ের প্রতিও মানুষের ছিল অগাধ আগ্রহ। আর তাই তারা এগুলো খুঁজে বেড়িয়েছে অবিরাম এবং এখনও খুঁজছে
আর তেমনই একটি জিনিস হচ্ছে আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে এই জিনিসটি সম্পর্কে মানুষ জানার পর এর অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষ খুঁজে বেড়িয়েছে বছরের পর বছর। ফলে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানান রহস্যের। আসুন আমরা আজ জানার চেষ্টা করি রহস্যময় সেই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট সম্পর্কে।
আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টক মূলত একটি সিন্দুক বা বাক্স। যাকে আবার আর্ক অব দ্য টিসটিমনিও বলা হয়। বলা হয় এই সিন্দুকটি ঈশ্বরের প্রেরিত একটি সিন্দুক। হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে এটি এক অপার রহস্যের বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে হিব্রুবাইবেল আর অন্যান্য প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ অনুসারে এই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট হচ্ছে ঈশ্বরের নির্দেশে নির্মিতএমন একটি সিন্দুক যার ভেতরে সযত্নে রাখা আছে সৃষ্টিকর্তার ১০টি অনুশাসনের বাণীপেন্টাটিউক অনুসারে সিনাই পর্বতে টানা ৪০ দিন থাকার পর সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে নবীমুসা (আঃ) এই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট নির্মাণের নির্দেশ পান। প্যালেস্টাইনে তৈরি হওয়ার কারণে আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টকে ইসরায়েলের সৌন্দর্য নামেও অভিহিত করা হয়। পবিত্রবাইবেলে বলা হয়েছেসিন্দুকটি ঈশ্বরের নির্দেশেই বানানো হয়েছিল। কাসিয়া নামে মিসরের একটি পবিত্র গাছের কাঠ দ্বারা এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আর সৌন্দর্য বর্ধনেরজন্য পরে এটিকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। সিন্দুকটি লম্বায় ১.১৫ মিটারপ্রস্থে ০.৭ মিটার আর উচ্চতায় ০.৭ মিটার। এটি বহন করার জন্য রয়েছে দুটি হাতল। নির্মাণের পর থেকে বহু বছর ইহুদিরা এটি তাদের কাছে সযত্নে রেখেছিল। ইহুদিরা যখন 'ল্যান্ড অব ক্যাননেএসে পৌছায়তখন তাদেরসেখানে আসার পথ দেখিয়েছিল এ সিন্দুকটি। বলা হয় এই সিন্দুকের কারণেই জর্ডান নদী দুই ভাগ হয়ে রাস্তা করে দিয়েছিল তাদের জন্য। রাজা ডেভিড ও তার ছেলে সলোমন জেরুজালেমে স্থানান্তর করে সিন্দুকটি একটি মন্দিরে রেখে দেন। বহু বছর পর ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুচাঁদনেজার ধ্বংস করে ফেলেন সেই মন্দিরটি। মুসলমান ধর্মশাস্ত্রবিদদের মতে আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টের ইতিহাস ইসলামের সাথে সবচেয়ে বেশী সংযুক্ত। আল্লাহর প্রেরিত নবী হযরত মুসা (আঃ) এর স্মৃতি জড়িত এই কাহিনীতে। পবিত্র আল কুরআনে এই বিষয়ে সূরা আল-বাকারাতে বর্ণনা করা হয়েছে।
অন্য একটি মতানুসারে আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট তৈরি হয়েছিল মোট দুটি। এর মধ্যে একটি নির্মাণ করেন হযরত মুসা(আঃ) এবং অপরটি নির্মাণ করেন বেজালিল। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ বিভিন্ন মত প্রদর্শন করলেও সবকিছুর ঊর্ধ্বে মূল কথা একটাই যেএটি একটি পবিত্র এবং সৌভাগ্যের প্রতীক। এতে রয়েছে স্রষ্টার অনুশাসনের বাণী। আর এই আর্ক অব দ্যকোভেন্যান্ট যার কাছে থাকবেসেই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী।
বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত মতানুসারে আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টের অস্তিত্ব সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় আছে সেই রহস্যময় আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট? কেন তাকে হাজার বছর ধরেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? 
অনেকে বলেনব্যাবিলন সভ্যতার কাছেই সিন্দুকটি রয়ে গেছে। আবার অনেকের মতেরাজা সলোমন সিন্দুকটির খারাপ ভবিষ্যৎ আন্দাজ করতে পেরে নিজেই সিন্দুকটি 'ডেড সি'র কাছে কোনও একটি গুহায় সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা আর জিম্বাবুয়ের লেম্বা সম্প্রদায়ের লোকদের দাবিতাদের পূর্ব-পুরুষরাই সিন্দুকটি বহন করে নিয়ে এসেছে। ইথিওপিয়ান খ্রিস্টানরা দাবি করেসিন্দুকটি আসলে ইথিওপিয়ারমিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। এরকম অনেকের অনেক রকম মত রয়েছে। কিন্তু আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টের প্রকৃত অস্তিত্ব আর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রত্নতত্ত্ববিদ লিন রিটমেয়ার গবেষণা করে জানিয়েছেনসিন্দুকটি বর্তমানে টেম্পল মাউন্টে রক্ষিত আছে। নির্মাণের বহু বছর পর্যন্ত সিন্দুকটি জেরুজালেমে ছিল বটে, কিন্তু সেখান থেকে হঠাৎ করেই সেটি হারিয়ে যায়।
এ শতাব্দীতে এসে নাকি সিন্দুকটির খোঁজ মিলেছে। যদিও এ নিয়ে কেউই কোনও কথা বলতে চায় না। তাই রহস্যগুলো আরও যেন জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। বলা হয়, কোনও পাপী ব্যক্তি কোনোভাবেই এই সিন্দুকটি স্পর্শ করতে পারে না। পাপীদের জন্য সিন্দুকটি দেখারও অনুমতি নেই। যখনই কোনও পাপী মানুষ এটি দেখতে গিয়েছে কিংবা স্পর্শ করতে চেয়েছেতখনই সে ঈশ্বরের কাছ থেকে কঠিন শাস্তি পেয়েছে। এত কিছুর পরও মানুষ থেমে নেই আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টকেখোঁজাখুঁজি থেকে। হাজার হাজার বছর ধরে তারা আজও খুঁজে বেড়াচ্ছে আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্টকে। আর তাই বিশ্বব্যাপী আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট একটি রহস্যের নাম।
র্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট এর রহস্যের হাত ধরে একে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচারণার ও কমতি নেই। ২০০৮ সালে 'চ্যানেল ফোর'এ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এ নিয়ে প্রচার হয়েছে বহু তথ্যচিত্র। এই সিন্দুককে ঘিরেনির্মিত হয়েছে বহু চলচ্চিত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে-১৯৫১ সালের 'ডেভিড ন্ড বাথশিবা', ১৯৫৬ সালের'দ্য টেন কমান্ডমেন্টস', ১৯৫৯ সালের 'সলোমন ন্ড শিবা১৯৮৯ সালের 'ইন্ডিয়ানা জোনস ন্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড', ২০০৮ সালের 'ইন্ডিয়ানা জোনস ন্ড দ্য কিংডম অব দ্য ক্রিস্টাল স্কাল', ২০১০ সালের 'মেগামাইন্ডপ্রভৃতি।
রহস্যময় আর্ক অব দ্য কোভেন্যান্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা ও প্রচারণার কোনও শেষ নেই। এটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে বা যায়নি সেটা নিয়েও এখন রহস্য তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ এই রহস্যময় বাক্সটি খুজে পাওয়ার দাবি করেছে। ইথিয়পিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার অংশ, ফ্রান্স, রোম, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, মিশর সহ অনেক দেশই বিভিন্ন সময়ে এই বাক্সটি উদ্ধার ও তাদের হস্তগত করার দাবি করেন। কিন্তু তার কোনও সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায় না। এখন দেখার বিষয় ভবিষ্যতে রহস্যময় এই সিন্দুকের কোনও খোজ পাওয়া যায় কিনা!

-----সংগ্রহকৃত।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter)!!

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার(Dark matter) ! লিখেছেন : হিমাংশু কর সেপ্টেম্বর 26, 2018 সৃষ্টিতত্ত (cosmology) ও মহাবিশ্বের দুরতম অঞ্চলগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পেরেছি।এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা।এ ছাড়াও আলোর গতির সীমাবদ্ধতার কারনেও আমরা এ সকল অঞ্চলগুলো সম্পর্কে এখনো ভাল মত জানি না।তবে আমাদের অর্জন ও কম না।আমরা ইতিমধেই আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ অভিযান এর জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছি।এও বা কম কি?তবে যাই হোক সে আলোচনা আর বাড়াবো না।এবার আমরা লক্ষ করব গ্যালাক্সিগুলোর দিকে।নিউটনের মহাকর্ষ বলের( gravitational force ) সুত্রগুলি যদি আমারা গ্যালাক্সিগুলোর উপর প্রয়োগ করি , তাহলে দেখা যাবে যে, গ্যালাক্সিগুলোর চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে পরার কথা।কিন্তু আমরা জানি গ্যালাক্সি বা তারকাপুঞ্জের ভেতরের বস্তুগুল একটি কেন্দ্রিয় বিন্দুর উপর নির্ভর করে ঘুরতেছে।কারন তাদের পারস্পারিক আকর্ষণ এক ধরনের কন্দ্রাতিক(centripetal) শক্তির সৃষ্টি করে থাকে।অবাক হবার কথা হল হিসাব করে দেখা গেছে এ ধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি করার মত পর্যাপ্ত বস্তু এসব গ্যালাক্সিগুলোর নেই।এই ব্যাপারটি ১৯৭০ এর দশকে ওয়াশিংটন ডি...

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্প - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - এক বনে ছিল এক হিংস্র বাঘ। সে যেকোনো প্রাণীকে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তো। কাউকে সে মানতো না। একদিন এক নিরীহ হরিণ সেই বাঘের কবলে পড়লো। হরিণটা অনেক যুদ্ধ করেও পালাতে পারলো না। বাঘ মাত্র ওকে সুবিধামতো কামড় বসাবে। এমন সময় হরিণের মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। হরিণ বলল, “ওহে বাঘ। তুমিতো সবাইকেই খাও। আমায় না হয় ছেড়ে দাও। আমার মাংস খেলে তোমার একটুও পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং বিনিময়ে আমি তোমাকে অনেকগুলো গরু দিবো। তা দিয়ে এক মাস চলে যাবে তোমার।” বাঘ কথাটা শুনে ভেবে দেখল কথাটাতো মন্দ না। তাই সে হরিণটাকে ছেড়ে দিল। পরে হরিণ চলে গেল সেখান থেকে। আর বাঘ তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু চালাক হরিণকে আর পায় কে? হরিণতো তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জীবনে রক্ষা পেল। তাই গায়ের জোর না থাকলেও বুদ্ধির জোর সবচেয়ে দামি। এই গল্প থেকে আমরা অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি: 1। কাউকে সহজেই বিশ্বাস করা ঠিক না। সহজেই বিশ্বাস করাটা বোকামি। 2। বিপদে পড়লে ভয় না পেয়ে বরং ভয়টাকে জয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 3। গায়ের শক্তি না থাকলেও বুদ্ধির জোর দিয়ে ...

বাসর রাত- ভালোবাসার গল্প

বাসর রাত সেপ্টেম্বর 25, 2018 গল্প লিখেছেন :  কাল্পনিক বাসর ঘরে ঢুকেই নববধূকে বললাম ‘ ফ্রেশ হয়ে আস। মুখের আটা-ময়দা দেখে বলতে পারবনা তুমি চাঁদের মত সুন্দর’ নববধূ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। তারপর বলল ‘বিয়ের আগে আমাকে দেখেননি?’ আমি মুখ বাঁকা করে বললাম ‘হ্যাঁ একবার তো দেখেছিলাম কিন্তু সেদিন আরো বেশি আটা-ময়দা ছিল’ নববধূ আমার দিকে যেভাবে তাকাল মনে হচ্ছে আমাকে চিবিয়ে খাবে। তারপর খাট থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাবার জন্য পা বাড়াল। আমি বললাম ‘তোমার নামটা যেন কি?’ নববধূ ভেংচি দিয়ে বলল ‘বাহ মাত্র একদিনে নামটাই ভুলে গেলেন? কালকে তো মনে হয় বলবেন “এই মেয়ে তুমি এ বাড়িতে কি কর” ‘ আমি জোর স্বরে বললাম ‘নামটা জিজ্ঞেস করেছি আর এত কথা শুনিয়ে দিলে। এত বেশি কথা মেয়েদের মুখে মানায় না।’ নববধূ ‘ইরা’ বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। . আমি বসেবসে হাসছি। আয়নার সামনে গিয়ে হাসছি। এরকম যন্ত্রণা মনে হয় বাসর রাতে কোন মেয়ে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে প্যারা ঘরে আবার আসল। এবার চোখেমুখে লজ্জা দেখতে পাচ্ছি। আটা-ময়দা ছাড়া তো ভালই দেখাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরবে মনে হয়। আমি বললাম ‘মিসেস প্যারা আপনাকে আটা-ময়দা ছ...