Skip to main content

নারীর ভূষণে ভয়ংকর ডাইনি!!

নারীর ভূষণে ভয়ংকর ডাইনি !



মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব তবে মানুষের সকল কাজই কিন্তু সেরা হয় না। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে যারা পৃথিবীকে আলোকময় করেছে আবার এমন কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব পৃথিবীতে ঘটেছে যাদের কাজ ও কর্ম দ্বারা পৃথিবী কলঙ্কিত হয়েছে। তবে সুখের সাথে একথা বলা যায় যে, তাদের সংখ্যা খুব বেশী নয়। যে সকল ব্যক্তির কর্মে মানবতা কলঙ্কিত হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ যেমন আছে তেমনি আছে নারী। আর তেমনই একজন নারী হচ্ছেন ইলচ কোচ।

এই নারী এতটাই জঘন্য ছিলেন যে, তাকে সম্বোধন করা হয় বুখেন ওয়ার্ল্ডের ডাইনি হিসেবে। ইলচ কোচ ছিল জঘন্যতম একজন খুনি মহিলা। সে কারাগারে বন্দীদের হত্যা করতো এবং তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষণ করতো।
ইলচ কোচ ১৯০৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে জার্মানির ডেরেসডেনে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ছিল কারখানার একজন কর্মচারী। তিনি শৈশবে একজন সদা হাস্যোজ্জল বালিকা ছিলেন। জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে ১৯৩২ সালে তিনি নাজি পার্টিতে যোগদান করেন। কোচের স্বামীর নাম ছিল কার্ল ওট্টো। যিনি পেশায় ছিলেন একজন কারারক্ষী। কোচ নিজেও ছিলেন ক্যাম্পের একজন সুপার ভাইজার। ১৯৩৬ সালে বার্লিনে তিনি এক ক্যাম্পের সুপার ভাইজার ও নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি কার্ল ওট্টোকে বিবাহ করেন। ১৯৪০ সালে কোচ একটি ইনডোর ক্রীড়া কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় পর্যন্তই কোচের ভাল সময় এবং এর পরের গল্পগুলো শুধুই অন্ধকার জগতের।
কোচ যখন ক্যাম্পের সুপারভাইজার ছিল তখন সে এক হৃদয় বিদারক ও নির্মম খেলায় মেতে উঠে। কোচের দায়িত্বে থাকা ক্যাম্পে যখন কোন নতুন বন্দী আনা হতো তখন সে সেই বন্দী গুলোকে সুন্দরভাবে পরখ করতো এবং দেখে রাখতো। কোচ সকল বন্দীদের দেখে যে সকল বন্দীদের শরীরে ট্যাটু অংকিত থাকতো এবং যাদের গায়ের রং ভাল তাদেরকে আলাদা করে রাখতো। এরপর এক সময় কোচ মেতে উঠতো পৈশাচিক নেশায়। তার দেখা যেসকল বন্দীদের শরীরে ট্যাটু ছিল তাদেরকে সে নির্মম ভাবে হত্যা করতো এবং তাদের চামড়া সমূহ তাদের গা থেকে ছাড়িয়ে নিত তারপর এই বর্ণিল চামড়াগুলো তার কাছে সংরক্ষণ করতো। এছাড়াও সে যে সকল বন্দীদের চামড়া সুন্দর তাদের সে হত্যা করতো এবং তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সে সংরক্ষণ করতো। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় শখ ছিল সুন্দর চামড়া ওয়ালা বন্দীদের হত্যা করে তাদের শরীরের চামড়া দিয়ে কুশন কভারসাইড ল্যাম্প,বালিশের কভারসহ অনন্যা জিনিস তৈরি করা। সে এই সকল বন্দীদের শরীরের চামড়া দিয়ে বালিশের কভার, বিছানা চাদর, টেবিলের কাপড়, কুশন কভার ইত্যাদি তৈরি করেছিল। কোচ নিজে ক্যাম্পের সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকা এবং তার স্বামীও একই ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকায় সে এই জঘন্য কাজগুলো সহজেই করতে পেরেছিল।
দীর্ঘ দিন এভাবে নির্মমতার পর কুখ্যাত এই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয় ১৯৪৩ সালের ২৪ অগাস্ট। কিন্তু তার এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের কোনও প্রমাণ তখন পাওয়া যায়নি। ফলে সঠিক প্রমাণের অভাবে জেল থেকে ছাড়া পায় কোচ কিন্তু তার স্বামী দোষী বিবেচিত হন এবং তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে কোচ চলে যায় লুদুইগবার্গ শহরে। সেখানে বসবাস করার সময় আমেরিকার সৈন্যরা তাকে আবার গ্রেফতার করে ১৯৪৫ সালের ৩০ জুন। পুনরায় গ্রেফতার হবার পর আবার বিচারের মুখোমুখি করা হয় কোচকে। দ্বিতীয়বার বিচারের সময় প্রকাশিত হতে থাকে তার নানান কুকীর্তির কথা। তিনি স্বীকার করেন তার নানান লোমহর্ষক কাহিনীর কথা। পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি তার বিভিন্ন প্রকারের জিনিস সমূহ। বিচারে কোচ দোষী বিবেচিত হওয়ায় ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু নিজের প্রতি অভিমান ও জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা হয়ে জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন রোচ। আর এভাবেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় নরপিশাচ বুখেনওয়ার্ল্ডের ডাইনি।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter)!!

রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার(Dark matter) ! লিখেছেন : হিমাংশু কর সেপ্টেম্বর 26, 2018 সৃষ্টিতত্ত (cosmology) ও মহাবিশ্বের দুরতম অঞ্চলগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানতে পেরেছি।এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা।এ ছাড়াও আলোর গতির সীমাবদ্ধতার কারনেও আমরা এ সকল অঞ্চলগুলো সম্পর্কে এখনো ভাল মত জানি না।তবে আমাদের অর্জন ও কম না।আমরা ইতিমধেই আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশ অভিযান এর জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছি।এও বা কম কি?তবে যাই হোক সে আলোচনা আর বাড়াবো না।এবার আমরা লক্ষ করব গ্যালাক্সিগুলোর দিকে।নিউটনের মহাকর্ষ বলের( gravitational force ) সুত্রগুলি যদি আমারা গ্যালাক্সিগুলোর উপর প্রয়োগ করি , তাহলে দেখা যাবে যে, গ্যালাক্সিগুলোর চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে পরার কথা।কিন্তু আমরা জানি গ্যালাক্সি বা তারকাপুঞ্জের ভেতরের বস্তুগুল একটি কেন্দ্রিয় বিন্দুর উপর নির্ভর করে ঘুরতেছে।কারন তাদের পারস্পারিক আকর্ষণ এক ধরনের কন্দ্রাতিক(centripetal) শক্তির সৃষ্টি করে থাকে।অবাক হবার কথা হল হিসাব করে দেখা গেছে এ ধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি করার মত পর্যাপ্ত বস্তু এসব গ্যালাক্সিগুলোর নেই।এই ব্যাপারটি ১৯৭০ এর দশকে ওয়াশিংটন ডি...

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্

বাঘ ও হরিণ: শিক্ষামূলক গল্প - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - এক বনে ছিল এক হিংস্র বাঘ। সে যেকোনো প্রাণীকে দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তো। কাউকে সে মানতো না। একদিন এক নিরীহ হরিণ সেই বাঘের কবলে পড়লো। হরিণটা অনেক যুদ্ধ করেও পালাতে পারলো না। বাঘ মাত্র ওকে সুবিধামতো কামড় বসাবে। এমন সময় হরিণের মাথায় একটা বুদ্ধি আসল। হরিণ বলল, “ওহে বাঘ। তুমিতো সবাইকেই খাও। আমায় না হয় ছেড়ে দাও। আমার মাংস খেলে তোমার একটুও পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং বিনিময়ে আমি তোমাকে অনেকগুলো গরু দিবো। তা দিয়ে এক মাস চলে যাবে তোমার।” বাঘ কথাটা শুনে ভেবে দেখল কথাটাতো মন্দ না। তাই সে হরিণটাকে ছেড়ে দিল। পরে হরিণ চলে গেল সেখান থেকে। আর বাঘ তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু চালাক হরিণকে আর পায় কে? হরিণতো তার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জীবনে রক্ষা পেল। তাই গায়ের জোর না থাকলেও বুদ্ধির জোর সবচেয়ে দামি। এই গল্প থেকে আমরা অনেকগুলো শিক্ষা নিতে পারি: 1। কাউকে সহজেই বিশ্বাস করা ঠিক না। সহজেই বিশ্বাস করাটা বোকামি। 2। বিপদে পড়লে ভয় না পেয়ে বরং ভয়টাকে জয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 3। গায়ের শক্তি না থাকলেও বুদ্ধির জোর দিয়ে ...

বাসর রাত- ভালোবাসার গল্প

বাসর রাত সেপ্টেম্বর 25, 2018 গল্প লিখেছেন :  কাল্পনিক বাসর ঘরে ঢুকেই নববধূকে বললাম ‘ ফ্রেশ হয়ে আস। মুখের আটা-ময়দা দেখে বলতে পারবনা তুমি চাঁদের মত সুন্দর’ নববধূ আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। তারপর বলল ‘বিয়ের আগে আমাকে দেখেননি?’ আমি মুখ বাঁকা করে বললাম ‘হ্যাঁ একবার তো দেখেছিলাম কিন্তু সেদিন আরো বেশি আটা-ময়দা ছিল’ নববধূ আমার দিকে যেভাবে তাকাল মনে হচ্ছে আমাকে চিবিয়ে খাবে। তারপর খাট থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাবার জন্য পা বাড়াল। আমি বললাম ‘তোমার নামটা যেন কি?’ নববধূ ভেংচি দিয়ে বলল ‘বাহ মাত্র একদিনে নামটাই ভুলে গেলেন? কালকে তো মনে হয় বলবেন “এই মেয়ে তুমি এ বাড়িতে কি কর” ‘ আমি জোর স্বরে বললাম ‘নামটা জিজ্ঞেস করেছি আর এত কথা শুনিয়ে দিলে। এত বেশি কথা মেয়েদের মুখে মানায় না।’ নববধূ ‘ইরা’ বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। . আমি বসেবসে হাসছি। আয়নার সামনে গিয়ে হাসছি। এরকম যন্ত্রণা মনে হয় বাসর রাতে কোন মেয়ে পায়নি। ফ্রেশ হয়ে প্যারা ঘরে আবার আসল। এবার চোখেমুখে লজ্জা দেখতে পাচ্ছি। আটা-ময়দা ছাড়া তো ভালই দেখাচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরবে মনে হয়। আমি বললাম ‘মিসেস প্যারা আপনাকে আটা-ময়দা ছ...